বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের ভয়াল ধাক্কা সামলে জেগে উঠছে নিউইয়র্ক সিটি। সবকিছু স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। খুলছে অফিস-আদালত। কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসায় ক্যাবিদের দুর্দিন কাটতে শুরু করেছে। ফিরতে শুরু করেছে সুদিন। পুরোদুমে না হলেও সন্তোষজনক আয় পকেটে নিয়েই ঘরে ফিরছেন ইয়েলো ট্যাক্সি ও অ্যাপভিত্তিক গাড়ির চালকেরা। তবে, আগামী সেপ্টেম্বরে বেকার ভাতা বন্ধ হলে আবারো কষ্টের দিন ফিরে আসতে পারে ক্যাবিদের। ১ লাখ ৩০ হাজার ক্যাবি গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামলে তখন গাড়ির জমা খরচ ওঠানোই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।
২০২০ সালের মার্চ মাসে নিউইয়র্কে করোনা বিস্তার লাভ করে। পরে শুরু হয় লকডাউন। ঘরবন্দি হয়ে পড়ে মানুষ। জনশূন্য হয়ে পড়ে নগরীর রাস্তাঘাট। থেমে যায় নিউইয়র্ক সিটির ইয়েলো ট্যাক্সি ও অ্যাপভিত্তিক গাড়ির চাকা। গত চার মাস ধরে ধীরে ধীরে খুলে দেওয়া হচ্ছে নিউইয়র্ক সিটি। ফলে চাহিদা বাড়ছে ইয়েলো ট্যাক্সি ও অ্যাপভিত্তিক গাড়ির।
জ্যাকসন হাইটসের বাসিন্দা ক্যাবি নাসির উদ্দিন জানান, গত ১৫ বছর ধরে তিনি নিউইয়র্ক সিটিতে ইয়েলো ক্যাব চালিয়ে স্বাচ্ছন্দে জীবনযাপন করছেন। কিন্তু গত বছর করোনাভাইরাস সব লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে। একপ্রকার বেকার হয়ে পড়েন তিনি। প্রথম যখন বেকার ভাতা দেওয়া শুরু হয় তখন ফেডারেল ৬০০ ডলার এবং স্টেট থেকে মাত্র ১৮২ টাকা পেতেন। কিন্তু পরে ফেডারেলের অর্থ বন্ধ হয়ে যায়। পরে তা চালু হলেও মাত্র ৩০০ ডলার দেওয়া হয়। তিনি বলেন, সবমিলিয়ে ৪৮২ ডলার পাচ্ছিলেন। এই অর্থ দিয়ে সংসার আর চলছিল না। বিশেষ করে বাসা ভাড়ার অর্থই জোগাড় হচ্ছিল না। অপেক্ষা করছিলাম, কবে সিটি স্বাভাবিক হবে। পরে সব যখন স্বাভাবিক হতে শুরু করলো, তখন কাজে নেমে পড়লাম।
নাসির উদ্দিন জানান, এখন ইয়েলো ক্যাব ও অ্যাপভিত্তিক গাড়ি কিছু চলাচল করছে। যে অনুপাতে সিটির অফিস-আদালত খুলছে সে অনুপাতে গাড়ির চাহিদা আছে। যারা সপ্তাহে ৫০৪ ডলার স্টেট থেকে এবং ৩০০ ডলার ফেডারেল থেকে পাচ্ছেন তাদের বড় একটি অংশ কাজে নামেননি। ফলে রাস্তায় গাড়ির চাহিদা রয়েছে।
উবার চালক নবাব উদ্দিন গিয়াস জানান, তিনি আগে ইয়েলো ট্যাক্সি চালাতেন। কিন্তু ইয়েলোতে ভয়াবহ দুর্দিন নেমে আসায় উবারে যোগ দেন। এখন তিনি ভাল আয় করছেন। কিন্তু সেপ্টেম্বরে বেকারভাতা বন্ধ হয়ে গেলে সব চালককে কাজে যোগ দিতে হবে। ফলে চাহিদার তুলনায় গাড়ি বেশী হয়ে যাবে। তখন সবার জন্য আয় কঠিন হয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে ট্যাক্সি অ্যালায়েন্সের লেবার অ্যাডভাইজার টিপু সুলতান জানান, ট্যাক্সি ক্যাবিদের সুদিন ফিরছে তা এই মুহূর্তে বলা কঠিন। কারণ এখন ট্যাক্সির ৯০ ভাগ এবং অ্যাপভিত্তিক গাড়ির ৮০ ভাগ ফেয়ার নেই। এখন যারা কাজ করছেন তারাও কাক্সিক্ষত আয় করতে পারছেন না। হয়তো ২-৩’শ ডলার পকেটে নিয়ে ঘরে ফিরছেন। এটাকে সুদিন বলা যাবে না। বরং তিনি এই দুঃসময়ে ক্যাবিদের পিপিপি লোনের সুযোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, আগামী ৩১ মে পিপিপি লোন আবেদনের সময় শেষ হচ্ছে। একজন ক্যাবি দুই বার এই লোন নেওয়ার সুযোগ পাবেন। যারা একবার আবেদন করেছেন, তারা আরো একবার পিপিপি লোন নিতে পারবেন। এই অর্থ অফেরতযোগ্য।
টিপু সুলতান জানান, একজন ক্যাবি বছরে গড়ে ১ লাখ ডলার মোট আয় করেন। ফলে তারা পিপিপি লোন আবেদন করলে কমপক্ষে ২০ হাজার ডলার পাবেন। এই অর্থ তিনি প্রতি সপ্তাহে ২ হাজার ডলার করে খরচ দেখাতে পারবেন। ফলে একজন ক্যাবি অন্তত ১০ সপ্তাহ স্বাচ্ছন্দে জীবনযাপন করতে পারবেন, যা তিনি কাজে যোগ দিয়েও এই পরিমাণ আয় করতে পারবেন না। সময় না বাড়ালে ৩১ মে’র পর আর এই সুযোগ থাকছে না। তাই দেরী না করে পিপিপি লোন আবেদনের জন্য ক্যাবিদের প্রতি আহ্বান জানান।
Posted ২:৫৯ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৭ মে ২০২১
America News Agency (ANA) | ANA