শনিবার ২০ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
শিরোনাম

নিউইয়র্কের বাংলাদেশ কনস্যুলেটে অ্যাপয়েন্টমেন্ট যেন সোনার হরিণ!

এনা অনলাইন :   বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ 392
নিউইয়র্কের বাংলাদেশ কনস্যুলেটে অ্যাপয়েন্টমেন্ট যেন সোনার হরিণ!

দেশে কারো মা অসুস্থ, কারো বাবা। কারো আবার অসুস্থ প্রিয়তমা স্ত্রী ও পরিবারের সদস্য। জরুরিভাবে তাদের দেশে যাওয়া দরকার। কিন্তু আমেরিকার পাসপোর্টে নো-ভিসা সিল নেই। কারো মেয়াদ উত্তীর্ণ বাংলাদেশি পাসপোর্টের। নবায়ন অথবা নতুন করে আবেদন করতে হবে। এ জন্য যেতে হবে কনস্যুলেটে, নিতে হবে অ্যাপয়েন্টমেন্ট। কিন্তু এই অ্যাপয়েন্টমেন্ট যেন এখন সোনার হরিণ। সেটা নিতে গিয়ে গলদঘর্ম হচ্ছেন প্রবাসীরা। আগামী মে মাস পর্যন্ত অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ফোন করলেও মিলছে না প্রত্যাশিত অ্যাপয়েন্টমেন্ট।

ভুক্তভোগী প্রবাসীদের অভিযোগ, অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট আগামী মে মাস পর্যন্ত নেই। এরপর আর দিন-তারিখও ওয়েবসাইটে রাখা হয়নি। বিকল্প হিসেবে কনস্যুলেটে ফোন করেও কাউকে পাওয়া যায় না। মেসেজ দিলেও কলব্যাক করছে না কেউ।

নিউইয়র্কের ওয়েস্টচেস্টারের বাসিন্দা মোহাম্মদ হক বলেন, তিনি গত এক সপ্তাহ ধরে অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য চেষ্টা করছেন। ২১ মে অ্যাপয়েন্টমেন্টও পেয়েছিলেন। কিন্তু তা অনেক দূরের তারিখ। অথচ জরুরি প্রয়োজনে তার এখনই দেশে যাওয়া দরকার। দেশে তার মা অসুস্থ। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টে নো-ভিসা নেই। এই নো-ভিসার জন্য তিনি অসংখ্যবার নিউইয়র্কের বাংলাদেশ কনস্যুলেটে যোগাযোগ করেছেন। ফোন করে ভয়েস মেসেজ রেখেছেন। কিন্তু সাড়া পাননি। পরে একজনের পরামর্শে বাংলাদেশি এক কমিউনিটি লিডারের মাধ্যমে অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়াই হাতে হাতে কাজটি করিয়েছেন। তিনি বলেন, অ্যাপয়েন্টমেন্ট যেন সোনার হরিণ হয়ে গেছে। আমি হয়তো লবিং করে কাজটি করেছি। কিন্তু যারা অ্যাপয়েন্টমেন্টই পাচ্ছে না তাদের কথা কেউ ভাবছে না।

  • জরুরি প্রয়োজনেও দেশে যেতে পারছেন না অনেকেই
  • সেবা প্রাপ্তির অপেক্ষায় কয়েক হাজার প্রবাসী
  • ৯৪ দিনের মধ্যে ৪৪ দিনই কনস্যুলেটে ছুটি

 

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বাংলাদেশের এয়ারপোর্টে অন-অ্যারাইভাল ভিসা বন্ধ রয়েছে। ফলে ঢাকায় নেমে নো-ভিসা না থাকায় অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত এসেছেন। অন্যদিকে পাসপোর্টে নো-ভিসা না থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু এয়ারপোর্ট থেকেও অনেকে ফ্লাইটে আরোহণ করতে পারেননি। জর্জিয়ার আটলান্টা এয়ারপোর্ট থেকে একজন বাংলাদেশিকে ফেরত দেওয়ার তথ্য ঠিকানার কাছে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট বহন করলেও বাংলাদেশের ভিসা না থাকায় তিনি আর রওনা হতে পারেননি। করোনাভাইরাসের কারণে অন-অ্যারাইভাল ভিসা বন্ধ রয়েছে, তা বিশ্বের বিমানবন্দরগুলো অবহিত হয়েছে।

২২ ফেব্রুয়ারি সোমবার বিকেলে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা ঠিকানাকে বলেন, বিকল্প উপায় অবশ্যই আছে। কনস্যুলেটের জরুরি সেবা চালু রয়েছে। খুব জরুরি হলে অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়াই কেউ সরাসরি এলে, বিশেষ করে প্লেনের টিকিট দেখালে তাকে সেবা দেওয়া হচ্ছে। কনসাল জেনারেল দাবি করেন, সোমবার ৩০-৪০ জনকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়াই কনস্যুলার সেবা দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, জরুরি ভিত্তিতে নো-ভিসা দেওয়া সম্ভব। কিন্তু এর বাইরে অন্যান্য সেবা, যেমন পাসপোর্ট নবায়ন, নতুন আবেদন, বার্থ সার্টিফিকেট ইস্যু ইত্যাদি তাৎক্ষণিকভাবে দেওয়া সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করেই আসতে হবে।

কনসাল জেনারেল আরো জানান, করোনাভাইরাসের কারণে সিডিসির নির্দেশনা মেনে প্রতিদিন কমপক্ষে ৮০ জনকে অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি স্বীকার করেন, অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু জরুরি প্রয়োজন হলে টেলিফোনে এবং সশরীরে কেউ কনস্যুলেটে এলে তাদের সেবা দেওয়া হচ্ছে।

কনস্যুলেটের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ৩১ মে পর্যন্ত মোট ৯৪ দিন অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকড হয়ে আছে। নতুন করে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার সুযোগ নেই। এই ৯৪ দিনের মধ্যে ১১ দিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশে সরকারি ছুটি। এ ছাড়া ৩৩ দিন রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সাপ্তাহিক ছুটি। ফলে ৯৪ দিনের মধ্যে কার্যদিবস মাত্র ৫০ দিন। সরকারি ও সাপ্তাহিক ছুটির কারণে ৪৪ দিনই বন্ধ থাকবে কনস্যুলেট। সে হিসাবে অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্টের সুযোগ পেয়েছেন চার হাজারেরও বেশি সেবাপ্রত্যাশী মানুষ। সেবা নিতে তাদের এখন শুধুই অপেক্ষার পালা।

এদিকে নিউইয়র্কের বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা থেকে প্রবাসীদের সশরীরে কনস্যুলেটে হাজির হয়ে সেবা গ্রহণের সুযোগ থাকলেও আওতাধীন আরো সাতটি রাজ্যে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা সশরীরে কনস্যুলেটে আসার ঝুঁকি নিতে পারছেন না। কারণ ফোন করলে অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়া না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

ওজোনপার্কের বাসিন্দা আব্দুল কাদির অভিযোগ করেন, কনস্যুলেটের ওয়েবসাইটে জরুরি সেবার জন্য ৬৪৬-৬৪৫-৭২৪২ নম্বর দেওয়া হয়েছে। এই ফোন নম্বরে ফোন করলে কেউ রিসিভ করেন না। এমনকি ভয়েস মেসেজ রাখারও কোনো সুযোগ নেই। কারণ এই নম্বরের ভয়েস মেইল বক্স পূর্ণ হয়ে গেছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, বিশ্বের প্রতিটি দেশের দূতাবাস বা হাইকমিশন, কনস্যুলেট বা মিশন তার দেশের নাগরিকদের জরুরি সেবা দিয়ে থাকে। ২৪ ঘণ্টা হটলাইন নম্বর চালু থাকে। ব্যতিক্রম নিউইয়র্কের বাংলাদেশ কনস্যুলেট। অথচ বিশ্বের রাজধানী হিসেবে পরিচিত নিউইয়র্কে অবস্থান করেও কাক্সিক্ষত সেবা দিতে পারছে না বাংলাদেশ কনস্যুলেট।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা বলেন, নিউইয়র্ক কনস্যুলেট সাধ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ সেবা দিচ্ছে। নিউইয়র্কে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশির বসবাস। এ কারণে সেবাগ্রহীতার চাপ রয়েছে কনস্যুলেটের ওপর। কিন্তু সে তুলনায় প্রয়োজনীয় জনবল ও অবকাঠামো নেই। তিনি জানান, এক দিনে ১ হাজার টেলিফোন কল রিসিভ করার নজির রয়েছে। জনবল বাড়াতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে জানান কনসাল জেনারেল।

এ ব্যাপারে ঠিকানার পক্ষ থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলামের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রেস মিনিস্টার শামীম আহমেদ জানিয়েছেন, নিউইয়র্ক কনস্যুলেটে সেবাগ্রহীতাদের চাপ রয়েছে। তবে নিউইয়র্কের কনস্যুলেটের আওতাধীন আটটি রাজ্যের বাসিন্দারা ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে জরুরি সেবা নিতে পারবেন। তিনি প্রবাসী বাংলাদেশিদের এ ব্যাপারে দূতাবাসে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়েছেন।

Facebook Comments Box

Comments

comments

Posted ১২:২৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১

America News Agency (ANA) |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

 

President/Editor-in-chief :

Sayeed-Ur-Rabb

 

Corporate Headquarter :

 44-70 21st.# 3O1, LIC. New York-11101. USA, Phone : +6463215067.

Dhaka Office :

70/B, Green Road, 1st Floor, Panthapath, Dhaka-1205, Phone : + 88-02-9665090.

E-mail : americanewsagency@gmail.com

Copyright © 2019-2024Inc. America News Agency (ANA), All rights reserved.ESTD-1997